সময় এমন একটা জিনিস যার পরিবর্তন হয়েই থাকে, সময় কখনো স্থির হয়ে থাকে না আর সেরকমটাই যেন আরো একবার দেখা গেল দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের এই ম্যাচে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হওয়ার পরে ইংল্যান্ড সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা নতুন ধরনের ক্রিকেট খেলবে অর্থাৎ দুর্দান্ত অ্যাটাকিং ক্রিকেট তারা খেলবে যার নাম দেওয়া হয় ব্যাজ-বল। যেখানে ডিফেন্স এর কোন জায়গা থাকবে না শুধুই থাকবে ব্যাট চালানো কিন্তু সেই করতে গিয়ে 2019 বিশ্বকাপে জয়লাভ করতে পারলেও ২০২৩ বিশ্বকাপে বদলে গেছে তাদের সময়।
ইংল্যান্ড বরাবর এটাই বলে আসছে যে ধরনের ক্রিকেট তারা খেলছে তাতে যেকোনো প্রতিপক্ষকে তারা খুব সহজেই হারিয়ে দিতে পারবে যদিও তাদের এই নতুন ধরনের ক্রিকেট শুধুমাত্র ইংল্যান্ড তার ঘরের মাটিতেই খেলতে পারছে। কারণ ঘরের বাইরে বিশেষত ভারতে বা এশিয়া মহাদেশে তাদের এই ধরনের ক্রিকেট মোটেই চলছে না ভারতের মাটিতে তো কোনোভাবেই চলছে না যার জন্য এবারের বিশ্বকাপে একের পর এক ম্যাচে পরাজিত হচ্ছে ইংল্যান্ড যেখানে গত চারটি ম্যাচের মধ্যে তারা তিনটি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। আর আজকের ম্যাচে ঘটে গেল যে লজ্জাজনক ঘটনা সেখানে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সব থেকে বড় হার, ২২৯ রানের বিশাল হার দিয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়লো ইংল্যান্ড।।
মুম্বাইয়ের ওয়ানখেরের ময়দানে হওয়া আজকের ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেই ইংল্যান্ড যেটা তাদের জন্য খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল এটা বলা খুব মুশকিল তার কারণ ব্যাটিং পিচের উপর প্রথমে ফিল্ডিং করলে বিপক্ষ দল যে একটা বড় রান করবেই এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাট করার সুযোগ করে দেয় ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার তরফ থেকে দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলে ইতিহাস গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হেনরি ক্লাসেন। প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ৩৯৯। মাত্র ৬৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন হেনরি ক্লাসেন। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন হেনরিক্স এবং ভ্যানডার ডু সেন। এর জবাবে ব্যাট করতে নেমে রীতিমতো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের দল।
বেন স্টোকসকে আজকের ম্যাচে খেলিয়েছে ইংল্যান্ড তবে তাকে যেমন খেলিয়েছে তার পাশাপাশি দলে একাধিক পরিবর্তন করে ব্যাটিংকে চরম দুর্বল করে ফেলেছে। আজকের ম্যাচে জায়গা দেওয়া হয়নি স্যাম কারণ, মঈন আলীকে। এমনকি পাঁচটা মেন বোলার খেলানো হয়েছে। সেখানে ৪০০ রান তারা করতে গিয়ে যদি পাঁচ জন বোলার থাকে তাহলে মাত্র ৬ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে এত রান করা কখনোই সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অলরাউন্ডারদের দরকার পড়েই, অথচ পাঁচটা জেনুইন বোলার খেলানো সত্বেও তারা এত বাজে বোলিং করেছে যে সাউথ আফ্রিকা ৪০০ রান পর্যন্ত টার্গেট দিয়ে দিয়েছে। আর এর জবাবে মাত্র ১৭০ রানের বান্ডিল হয়ে গেল ইংল্যান্ডের দল অর্থাৎ 229 রানের একটা লজ্জা জনক পরাজয় গতবারের চ্যাম্পিয়নদের।
ইংল্যান্ডের তরফ থেকে কোন ব্যাটসম্যান পিচের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি কারণ হিসেবে যদি বলা হয় তাহলে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা, রাবাডা থেকে শুরু করে মহারাজ প্রত্যেকেই অনবদ্য বোলিং করেছেন এবং উইকেট পেয়েছেন। সবমিলিয়ে ইংল্যান্ডের খামখেয়ালিপনার জন্য তারা এই ম্যাচে এত খারাপ ভাবে গো হারা হলো।
স্যাম কারণকে না নেওয়া হলেও আজকের ম্যাচে মইন আলিকে কতটা দরকার ছিল সেটা এটা থেকেই বোঝা যায় যে ইংল্যান্ডের প্রত্যেক পেশ বোলার কিছু না হলেও ওভারে ১০ থেকে ১২ রান করে দিয়েছেন সেই জায়গায় একমাত্র স্পিনার আদিল রাশিদ, ওভারে ৬রান করে দিয়েছেন আবার দুটো উইকেট ও পেয়েছেন। সুতরাং ভারতের মাটিতে খেলা হচ্ছে আর সেখানে স্পিনার এবং অতিরিক্ত ব্যাটসম্যানকে না নিয়ে শুধুমাত্র ব্রেনস্টোকে মাথায় চাপিয়ে যদি ইংল্যান্ড নাচার চেষ্টা করে তাহলে ভালো দলের বিরুদ্ধে কোনদিনই বিশ্বকাপে কোন ম্যাচ জিততে পারবে না ভারতের মাটিতে।