৫৩ বছর আগে চাঁদের পথে আর্মস্ট্রংদের কারা ধাওয়া করে? অর্ধশতাব্দী পরে ফাঁস চাঞ্চল্যকর রহস্য!

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। পৃথিবীর মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল সে দিন। চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন মহাকাশচারীরা। সফল ভাবে পা রেখেছিলেন চাঁদের মাটিতে।চাঁদের মাটিতে পা রাখা প্রথম মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। তার পর চাঁদে নামেন এডুইন অলড্রিন। পৃথিবীর এক মাত্র উপগ্রহে আমেরিকার পতাকা গেঁথে দিয়ে এসেছিলেন তাঁরা।আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিনদের সঙ্গে নাসার ‘অ্যাপোলো ১১’ মিশনের মহাকাশযানে ছিলেন আরও এক জন। তিনি মাইকেল কলিন্স। চাঁদের মাটিতে তিনি পা রাখেননি। তবে আর্মস্ট্রংদের রোমাঞ্চকর যাবতীয় অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছিলেন তিনিও।

প্রথম সফল চন্দ্র অভিযানের পর পৃথিবীতে ফিরে এসে নানা অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন আমেরিকার মহাকাশচারীরা। তার মধ্যে অলড্রিনের একটি দাবি গবেষকদের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ‘অ্যাপোলো ১১’ মিশনের পর অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও যা নিয়ে চর্চা থামেনি। চাঁদ থেকে ফেরার পর অলড্রিন জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁদের যাত্রাপথে অজ্ঞাতপরিচয় কোনও বস্তু দেখেছিলেন। সেটি আসলে কী, তা তিনি বুঝতে পারেননি। তবে কিছু যে দেখা গিয়েছিল, সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত।অলড্রিন জানিয়েছিলেন, তিনি ‘অ্যাপোলো ১১’ মহাকাশযানের ভিতর থেকে একটি আলো দেখতে পেয়েছিলেন। আলোটি নড়ছিল। তাঁদের চন্দ্রযানের সঙ্গে সঙ্গেই যেন এগিয়ে চলেছিল রহস্যময় সেই আলো। যেন মহাশূন্যে কেউ বা কারা তাঁদের পিছু নিয়েছিলেন।

২০১৪ সালে একটি সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অলড্রিন বলেন, ‘‘আমি যা দেখেছিলাম, সেটি আসলে কী, তা নিয়ে একাধিক বিশ্লেষণ রয়েছে। কেউ বলেছিলেন ওই রহস্যময় আলো আসলে পৃথিবীর অন্য কোনও দেশ থেকে গোপনে পাঠানো অন্য কোনও মহাকাশযানের। কেউ বলেছিলেন, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনও গ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান থেকে বেরিয়ে আসছিল ওই আলোর ছটা।’’অলড্রিন আরও বলেছিলেন, ‘‘চন্দ্রযানের জানলা দিয়ে আমি সে দিন যা দেখেছিলাম, কেউ কেউ বলেন, সেটা আমাদেরই রকেট। যে রকেট থেকে সদ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল আমাদের মহাকাশযানটি। এ ছাড়া, আমরা যখন ল্যান্ডারটি রকেট থেকে আলাদা করেছিলাম, তখন যে চারটি প্যানেল বেরিয়ে গিয়েছিল, কারও মতে, জানলা দিয়ে সে দিন সেই প্যানেলের আলো আমার চোখে পড়েছিল।’’

সত্যিটা কিন্তু অনেক আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ‘অ্যাপোলো ১১’-তে সওয়ার যাত্রীরা পৃথিবীতে ফিরে আসার পর মহাকাশ গবেষকরা অলড্রিনের এই রহস্যময় অভিজ্ঞতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। তাতে প্রকাশ্যে আসে নতুন তথ্য।অলড্রিনই পরবর্তী কালে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানান, রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্যানেলগুলির জন্য ওই আলো তাঁর চোখে পড়েছিল। প্যানেলে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। তা দেখে তাৎক্ষণিক ভাবে অলড্রিন বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, অন্য কোনও মহাকাশযান তাঁদের পিছু নিয়েছে। কেউ বা কারা তাঁদের অনুসরণ করছেন বলে মনে হয়েছিল অলড্রিনদের।অলড্রিনের অন্য মহাকাশযানের দাবি শুনে অনেকেই গল্পের গরু গাছে চড়িয়ে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, নাসার চন্দ্র অভিযানের পিছু নিয়েছিল ভিন্‌গ্রহীরা। নানা তথ্য সংগ্রহ করে এই দাবি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন কেউ কেউ।

তাঁদের নিয়ে মশকরা করে পরে অলড্রিন বলেন, ‘‘আমেরিকার এই ‘ইউএফও-বিশ্বাসী’রা আমার উপর বেশ চটে গিয়েছেন। আমি যা দেখেছিলাম, তার সঙ্গে যে আদৌ ভিন্‌গ্রহের কোনও সম্পর্ক নেই, এই সত্যি জানতে পেরে তাঁরা হতাশ।’’অলড্রিনের এই দাবি পরবর্তী কালে সমর্থন করেছিলেন নীল আর্মস্ট্রংও। তবে সরাসরি তাঁর মুখে ‘রহস্যময় ওই আলো’র কথা শোনা যায়নি।ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউব, চারদিকে নানা ছবি, ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে বার বার। ইউটিউবের একটি ভিডিয়োতে নাসার তরফে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছিল। ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়া তবু বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ।নাসার ‘অ্যাপোলো ১১’ সফল হওয়ার পর অলড্রিনের দাবি প্রকাশ্যে আসা থেকেই তা নিয়ে নানা মত প্রচলিত রয়েছে। গবেষকরা একটি তত্ত্বকে সত্যি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে চর্চা থামেনি। বিশেষত সমাজমাধ্যমে অলড্রিনের দাবি এবং ‘এলিয়েন থিয়োরি’ বেশ জনপ্রিয়।মূলত যে ছবি দেখিয়ে অলড্রিন ইউএফও (ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান) তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন, সেটি আসলে আর এক আমেরিকান মহাকাশচারী চার্লস ডিউক জুনিয়রের। তিনি ১৯৭২ সালের ‘অ্যাপোলো ১৬ মিশন’-এর যাত্রী। অলড্রিনদের অভিযানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল না।১৯৬৯-এর পর অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত। চাঁদের আবার মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে নাসা। এ বারের মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর্টেমিস’। পর পর তিনটি ধাপে এই মিশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রথম ধাপ ইতিমধ্যে সফল হয়েছে।‘আর্টেমিস ১’-এ মহাকাশযান পাড়ি দিয়েছে চাঁদের উদ্দেশে। এতে কোনও মহাকাশচারী ছিলেন না। পরবর্তী ধাপেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মনুষ্যবিহীন যান পাঠানো হবে পৃথিবীর উপগ্রহে। তা সফল হলে তৃতীয় ধাপে চাঁদে ফের পা রাখবে মানুষ।