দিনে গাছ, রাতে বিছানার সঙ্গে বাঁধা থাকে নীরব

শিশুটিকে বেঁধে রাখার দৃশ্য দেখে যে কারও মনে হবে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এর পেছনে রয়েছে আট বছরের কষ্টের গল্প, কয়েক বছর ধরে নীরবের (১০) এমনই বন্দি জীবন কাটছে, পরিবারের পক্ষ থেকে নীরবের চিকিৎসায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করা হলেও মেলেনি সুস্থতা, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে এখন ছেলের মৃত্যু কামনা করছেন মা।

```

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি নানা বাড়ি নীরবের জন্ম হয়।জন্মের দুদিন পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে নীরব, পরে এক বছর বয়সেও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না নীরব। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে জানতে পারেন বিভিন্ন সমস্যার কথা। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা শুরু করেন।এক বছর পর মাটি খুঁড়ে গর্ত করে নীরবকে সারাদিন গর্তে রাখতে শুরু করে পরিবার। যাতে সে হেলে না পড়ে।

```

এভাবে বছর খানেক রাখার পর হাঁটতে শুরু করলেও কথা বলতে পারে না নীরব। ধীরে ধীরে কথা বলতে পারলেও ভালোমন্দ বুঝতে পারে না।এভাবে বছর দুই যেতে না যেতেই মানুষের ক্ষতি করা শুরু করে। তখন তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখতে শুরু করে পরিবারের লোকজন,কিন্তু গাছের সঙ্গে এক হাত বা এক পা বেঁধে রাখলে নিজের মাথা গাছের সঙ্গে ঠুকতে থাকে সে। তাই দুই হাত টানা দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়।শক্ত বস্তুতে নিজের মাথা ঠুকতে থাকে।

ঘুমের ওষুধ ছাড়া কখনও রাতে ঘুমায় না নীরব। প্রতিদিন বিকেলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর রাতে বিছানায় দুই হাত ও দুই পা বেঁধে রাখা হয়। কারণ ঘুম থেকে উঠে সে যেন কারও ওপর আঘাত করতে না পারে। শিশু নীরবের মা বলেন, একজন মা কখনও সন্তানের মৃত্যু কামনা করে না। আমি মা হয়ে সন্তানের মৃত্যু কামনা করি। কারণ ছেলেকে সুস্থ করার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। খেয়ে না খেয়ে চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সংসার চলে না। অভাবের কারণে কখনও কখনও ঠিক মতো পেটে খাবার জোটে না। কীভাবে ছেলের চিকিৎসা খরচ চালাব। ছেলের কষ্ট আর সহ্য হয় না।

নীরবের নানা বলেন, নীরবকে প্রতিদিন সকালে দুই হাত দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখতে হয়। কারণ সে যেন গাছের সঙ্গে মাথা ঠুকতে না পারে। এর আগে অনেক বার গাছের সঙ্গে মাথা আঘাত করার তার মাথা ফেটে রক্ত বের হয়েছে। বেঁধে না রাখলে তার সমবয়সী শিশুদের মাথা দিয়ে আঘাত করে সে। অনেক সময় মাথা ব্যথার কারণে সে নিজের মাথায় ইট, পাথর অথবা গাছের সঙ্গে আঘাত করে। আমরা এখন কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।

স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, অনেক কষ্ট লাগে যখন দেখি শিশু নীরব চিৎকার করে বলছে, আমাকে ছেড়ে দাও খেলতে যাব। প্রতিদিন বেঁধে রাখতে হয় নীরবকে। কারণ সে ভালোমন্দ বোঝে না। কখন কী করতে হয়, কীভাবে খেলাধুলা করতে হয় তাও জানে না, কেউ নীরবের পাশে দাঁড়ালে হয়তো তার জীবন আশার আলো দেখতো।