অ্যাশেজের শুরুটা একেবারেই অ্যাশেজের মতোই হল। এজবাস্টনে টানটান উত্তেজনার প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে দুই উইকেটে হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া। অথচ ৪০ মিনিট আগেও অস্ট্রেলিয়ার হার নিশ্চিত মনে হচ্ছিল। সেখান থেকে নবম উইকেটে ৫৫ রান যোগ করে ইংরেজের মুখের গ্রাস থেকে জয় কেড়ে নিলেন প্যাট কামিন্স এবং নাথান লিয়ন। শেষপর্যন্ত ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। যা অজি অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে তাঁর সর্বাধিক রানের ইনিংস। আর সম্ভবত তাঁর কেরিয়ারের সেরা টেস্ট ইনিংসও বটে।
পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১৭৪ রান (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮১ রান)। ইংল্যান্ডের দরকার ছিল সাত উইকেট। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টির জেরে নির্দিষ্ট সময় খেলা শুরু হয়নি। অবশেষে দুপুর ২ টো ১৫ মিনিটে (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) পঞ্চম দিনের খেলা শুরু হয়। শুরুটা মন্দ করেননি খোয়াজা এবং ‘নাইট ওয়্যাচম্যান’ স্কট বোল্যান্ড। দিনের প্রথম সাত ওভারে নিজের উইকেট ধরে রাখেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার। শেষপর্যন্ত বোল্যান্ডকে ফিরিয়ে দেন স্টুয়ার্ড ব্রড। বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি ট্র্যাভিস হেডও। যিনি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দুরন্ত খেললেও অ্যাশেজের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হলেন। তবে তাঁকে যে বলে আউট করেন মইন আলি, সেটা দুর্দান্ত ছিল।
হেড আউট হয়ে যাওয়ার পর ক্যামেরন গ্রিনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে টানতে থাকেন খোয়াজা। দু’জনে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১০০-র নীচে নামিয়ে আনেন। যত সময় যাচ্ছিল, তত নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছিল এজবাস্টন। সেই মুহ্যমান এজবাস্টনে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন ওলি রবিনসন। আউট করে দেন গ্রিনকে। ৬৬ বলে ২৮ রান করে যখন গ্রিন আউট হন, তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ছয় উইকেটে ১৯২ রান।
তবে খোয়াজা যেন অন্য পিচেই খেলছিলেন। তাঁকে কিছু আউট করতে পারছিলেন না ইংরেজরা। তারপরেই আসে স্টোকস স্পেশাল মুহূর্ত। স্টোকস কেন যে স্টোকস, ফের সেই প্রমাণ দেন ইংরেজের অধিনায়ক। ৭২ তম ওভারের শেষ বলে স্টোকসের ঢিমেগতির বলে বোকা বনে যান খোয়াজা। ১৯৭ বলে ৬৫ রান করে আউট হয়ে যান। তবে সেখানেই স্টোকস স্পেশালের শেষ হয়নি। নয়া বল না নিয়ে রুটকে দিয়ে বল করিয়ে যেতে থাকেন স্টোকস। সম্ভবত অ্যালেক্স ক্যারির বিরুদ্ধে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সাফল্যের বিষয়টি বিবেচনা করে সেই সিদ্ধান্ত নেন। তাতে সাফল্যও মেলে। ক্যারিকে আউট করেন রুট। সেই উইকেটের ফলে প্রবল চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সেইসময় জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৫৪ রান। হাতে পড়ে ছিল দুই উইকেট।
- ১) ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস: আট উইকেটে ৩৯৩ রানে ডিক্লেয়ার (জ্যাক ক্রলি- ৬১ রান, রুট- ১১৮ রান, জনি বেয়ারস্টো- ৭৮ রান, নাথান লিয়ন- ১৪৯ রানে ৪ উইকেট)।
- ২) অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস: ৩৮৬ রানে অল-আউট (খোয়াজা- ১৪১ রান, হেড- ৫০ রান, ক্যারি- ৬৬ রান, কামিন্স- ৩৮ রান, ব্রড- ৬৮ রানে ৩ উইকেট, রবিনসন- ৫৫ রানে ৩ উইকেট)
- ৩) ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস: ২৭২ রানে অল-আউট (রুট- ৪৬ রান, হ্যারি ব্রুক- ৪৬ রান, স্টোকস- ৪৩ রান, কামিন্স- ৬৩ রানে ৪ উইকেট, লিয়ন- ৮০ রানে ৪ উইকেট)।
- ৪) অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস: আট উইকেটে ২৮২ রান। (খোয়াজা- ৬৫ রান, কামিন্স ৪৪ অপরাজিত)
সেই পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার হার কার্যত নিশ্চিত মনে হলেও অন্য পরিকল্পনা ছিল কামিন্স এবং লিয়নের। ইংরেজ পেসারদের সামলে ধীরে-ধীরে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। শেষপর্যন্ত যখন জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ রান বাকি ছিল, তখন ‘বডি লাইন’ ট্যাকটিক্স নেন ব্রড এবং রবিনসন। বিশেষত রবিনসন তো এমন বল করছিলেন, মনে হচ্ছিল সেই ‘বডি লাইন’ সিরিজ হচ্ছে। তাতেও অবশ্য দমেননি কামিন্সরা। শেষপর্যন্ত রবিনসনের বলেই চার মেরে দেশকে জিতিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। ৭২ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন লিয়ন।