হিমালয়ের চেয়ে চারগুণ বড়! পৃথিবীর বুকে হারিয়ে যাওয়া পর্বতের হদিশ পেয়ে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

হিমালয় (Himalaya)পর্বতশ্রেণির দীর্ঘ বিস্তার আমাদের বিস্ময় জাগায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে দীর্ঘ ৮,৮৪৮ মিটার মাথা তুলে দাঁড়ানো মাউন্ট এভারেস্ট (Mt. Everest) এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বেরই উচ্চতম শৃঙ্গ। কিন্তু জানেন কী হিমালয়ের চেয়েও চারগুণ বিস্তৃত পর্বতমালা ছিল এই পৃথিবীতে! তাও আবার একটি নয়, দু-দুটি পর্বতের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কালের নিয়মে সেসব তলিয়ে গিয়েছে অতলে। সম্প্রতি সেই হারিয়ে যাওয়া পর্বতমালার হদিশ পেয়ে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা। সদ্য আবিষ্কারকে ‘সুপারমাউন্টেন’ অ্যাখ্যা দিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, আজকের পৃথিবী গঠনের নেপথ্যে এই পর্বতমালার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

সে প্রায় ২০০ কোটি বছর আগেকার কথা। ৮ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ছিল সেই পর্বতমালা। সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটরি সায়েন্স’এ প্রকাশিত হয়েছে এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি। তা থেকেই জানা গিয়েছে একাধিক তথ্য। জারকন (zircon) ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ওই বিস্তৃত ভঙ্গিল পর্বতের অস্তিত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। জানা গিয়েছে, খনিজ এবং বহু বিরল মৌল পদার্থ (Rare Earth Elements) সমৃদ্ধ ছিল ওই পর্বতশ্রেণি। প্রবল চাপে ধীরে ধীরে তা ভূপৃষ্ঠের উপর গভীর ছাপ রেখে নিজে অবলুপ্ত হয়ে যায়।

```

এছাড়া একই ধরনের আরেকটি পর্বতশ্রেণির হদিশ মিলেছে আজ থেকে প্রায় ৬০ কোটি বছর আগের। তারও বিস্তার ছিল প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এই দুই পর্বতশ্রেণি ‘সুপারমাউন্টেন’, যা পৃথিবীর পরিবর্তনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। প্রধান গবেষক অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি (PhD)পড়ুয়া জিয়ি ঝু’র মতে, ”আজকের দিনে ওই দু’টি সুপারমাউন্টেনের আর কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাই না আমরা। ভাবুন তো, এক হিমালয়ের চেয়েও তিন-চারগুণ বড়! এর শুধু উচ্চতা নয়, বিস্তারও আমাদের কল্পনার বাইরে।”

৬০ কোটি বছর আগে যে পর্বতশ্রেণিটি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে। বলা হচ্ছে, ট্রান্সগন্ডোয়ানা সুপারমাউন্টেন, যার সঙ্গে পৃথিবীর প্রথম বৃহৎ জীব জন্মের সম্পর্ক রয়েছে। এই আমলে যেসব জীবজন্তুর জন্ম হয়েছিল, তারা সবাই এখন ফসিল। গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, এই পর্বতমালা বিস্তৃত আর সংকুচিত হতে হতে ধরিত্রীকে প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ জুগিয়ে গিয়েছে।

```

ফসফরাস, আয়রনের মতো খনিজ যেমন মাটিকে উর্বর করেছে, তেমনই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সরবরাহও বেড়েছে। ফলে জীবজগতের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আদিকালের জোড়া পর্বতমালার হদিশ নিঃসন্দেহে পৃথিবীর জন্মবৃত্তান্তে নবতম সংযোজন।