ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন চিকিৎসক, যা বললেন জানলে চমকে যাবেন!

বিগত ৩ টে সপ্তাহ যেন সব বাঙালির রক্তচাপ ঊর্ধ্বমুখী করে তুলেছিল। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লড়ে চলেছিল ঐন্দ্রিলা (Aindrila Sharma)। তার সঙ্গে সহযোদ্ধা হতে চেয়েছিল সকলেই। তাই হয়তো সশরীরে আজ না থেকেও ঐন্দ্রিলা রয়ে গেছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ তন্বী হয়ে।বিগত ৭ বছরে বারবার যমদূতদের ধমকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। কালের নিয়মও যেন বারবার হেরে গেছে জেদি ঐন্দ্রিলার কাছে। লড়াইটা ছিল জারি। তাই ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর ৭২ ঘন্টা পরেও সে রয়ে গেছে চিকিৎসকের মনে। তার চিকিৎসক যে গল্প শোনালেন তা শুনলে রীতিমত চমকে যেতে হয়।

চিকিৎসকের চোখে ঐন্দ্রিলা একজন ‘ফাইটার’ যাকে কোনোদিনই লড়াই করতে বলতে হয়নি। বরং লড়াই যে কি জিনিস সেটা শিখিয়েছেন ঐন্দ্রিলা, এমনটাই অকপটে স্বীকার করেছেন ঐন্দ্রিলার এক চিকিৎসক।বেসরকারি হাসপাতালের এক ক্যানসার চিকিৎসক তার কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন ঐন্দ্রিলার লড়াইয়ের সবটুকু। তিনি লিখেছেন, “ফাইটার বিশেষণটা ঐন্দ্রিলার জন্য একেবারে ঠিকঠাক। মনের জোরে একটা মানুষ কী ভাবে বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে এনেছে, তার সাক্ষী তো আমিই। কখনও বলতে হয়নি, ‘ফাইট, ঐন্দ্রিলা ফাইট’।

```

মেয়েটার লড়াই করার ইচ্ছেকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। ঐন্দ্রিলার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার বাকি সকলের। এমনকি, চিকিৎসকদেরও। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্যানসার হলে অনেকে গোপন করতে চান। ও কিন্তু সেটা করেনি। কেমোথেরাপির নেওয়ার পর চুল উঠে গেলেও পরচুল পরেনি।প্রতি বার সেই সত্যিটাকে নিয়েই ও লড়ে গিয়েছে। জয়ী হয়েছে। আবার হেরেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে নিয়ে এ ভাবেই লড়ে গিয়েছে জীবনের মাঠে।”এছাড়াও ওই চিকিৎসক ঐন্দ্রিলার ৭ বছরের দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা স্মরণ করে উজ্জ্বল চোখে লিখেছেন, “মনে পড়ছে, ২০১৫ সালে দিল্লির এমসে গিয়েছিল ঐন্দ্রিলা। ‘সফ্‌ট টিস্যু সারকোমা’র চিকিৎসা নিয়ে আর এক প্রস্ত মতামত নেওয়ার জন্য। সেখানে থেকেই সোজা আমার কাছে। এখানেই ওর চিকিৎসা শুরু হয়।

কেমোথেরাপির পর রেডিয়োথেরাপি। কয়েকটি কেমো ও বহরমপুরে নিজের বাড়িতেও নিয়েছিল। তবে মেয়েটার মধ্যে অদম্য জেদ ছিল তখন ও ছোট ছিল।তাও অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছেটা যেন ওকে লড়তে শিখিয়েছিল। তারপর আবার দ্বিতীয়বার ক্যানসার ধরা পড়ে গতবছর। সেবার ফুসফুসে এক জটিল অস্ত্রোপচার করতে হয়। অপারেশনের আগে ওকে রিস্কের কথা বলতেই ও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিল। সেবারেও মনের জোরেই লড়াইটা জিতেছিল ঐন্দ্রিলা। তবে গত ১ নভেম্বরে যখন ব্রেন স্ট্রোক হয়ে হাসপাতালে ওকে আনা হল, তখন কিছুটা নিস্তেজ হয়েছিল। তবে ২০ দিন ভেতর ভেতর একই লড়েছিল মেয়েটা।”

```

শেষে চিকিৎসক আবেগী সুরে লেখেন, “২০১৫ থেকে ২০২২— বছরের হিসাবে হয়তো সাত বছর ঐন্দ্রিলার চিকিৎসা করেছি। বিশ্বাস করেছি ও আরও বহু বছর বেঁচে থাকবে। আসলে ও-ই আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে, বেঁচে থাকতে সাত সমুদ্র তেরো নদীর বাধা পেরোনোর মন্ত্র একটাই— লড়াই। আর সেই লড়াইয়ের ময়দানে কখনও না কখনও, কোনও না কোনও ‘ফাইটার’কে থামতে তো হয়ই!” তবে থামতে হলেও ঐন্দ্রিলা আজও ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ পরিচয় পায় সকলের কাছে। কারণ একটাই, ওর লড়াই।