পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতার কথা সর্বজনবিদিত। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দে নীলনদের তীরে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তাতে ছিল আধুনিকতার স্পষ্ট ছাপ। মিশরের বুকে সভ্যতার সেই চিহ্ন ঐতিহাসিক গবেষকদের কাছে আজও বিস্ময়ের। সাম্প্রতিক আবিষ্কার আরও এক বিস্ময় সৃষ্টি করল।
মিশরের নীলনদের তির থেকেই উঠে এল আরও একটি হারানো শহরের ধ্বংসাবশেষ। শনিবার মিশরের লাক্সর শহর থেকে মাটির খননকার্য চলাকালীন প্রাচীন সভ্যতার বেশ কিছু ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। তাঁরা জানিয়েছেন, একটা আস্ত হারিয়ে যাওয়া শহরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এখন পর্যন্ত যত শহর আবিষ্কার হয়েছে, তার মধ্যে এই শহরটি বৃহত্তম।
প্রায় ৩০০০ বছর আগেকার কথা। নীল নদের ধারে রাজত্ব করতেন ফ্যারাওরা। ফ্যারাওদের রাজত্বকালে অস্তিত্ব ছিল এই শহরের। লাক্সারের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছে প্রাচীনকালে ব্যবহৃত পাত্র, মানুষ ও পশুপাখির হাড়গোড়। আর মিলেছে বাঁকানো ইটের দেওয়াল। মিলেছে প্রাচীন রাস্তাঘাটের চিহ্ন। এই সব ধ্বংসাবশেষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রত্নতত্ত্ববিদরা অনুমান করেছে এই শহরের অস্তিত্ব ছিল ফ্যারাও আমলে।
এই শহর আবিষ্কারের পর মিশরের স্বনামধন্য প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহি হাবাস বলেন, এটা একটা খথুব বড় শহর, যেটা হারিয়ে গিয়েছিল। প্রাচীন মিশরীয় দেবতা অ্যাটন এবং ফ্যারাও তৃতীয় আমেনহোটেপের সঙ্গে এই শহরের যোগাযোগ রয়েছে। লাক্সারের এই শহরের সমাজব্যবস্থা মোট তিনটি অংশ পাওয়া গিয়েছে। একটি প্রশাসনিক কাজের জন্য, একটি শিল্প কলকারাখা বা বাণিজ্যের জন্য।, আর তৃতীয়টি কর্মচারীদের বিশ্রামের জন্য।
এছাড়া খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, মাংস শুকনোর জায়গা, জামাকাপড়-জুতো বানানোর জায়গা এবং ছোটোখাটো মূর্তি বানানোর জায়গাও। এই শহরের পুরো এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। উত্তর-পশ্চিমে আরও অনেকটা বিস্তৃত লাক্সরের এই হারানো শহর। এই শহরকে হারিয়ে যাওয়া সোনার শহর বলে অভিহিত করা হয়েছে। মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে গত সেপ্টেম্বরে খননকার্য শুরু করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। খননকার্য চলাকালীন হারানো শহরের হদিশ পেয়ে, তাঁরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। এই শহরের পুরোটা আবিষ্কার হয়ে গেলেই বোঝা যাবে এর আয়তন কত ছিল, কতদূর বিস্তৃত ছিল শহরটি।