রিঙ্কু সিংকে নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন ৫টি ছয় খাওয়া বোলার যশ দয়ালের বাবা!

অবিশ্বাস্য একটি ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ক্রিকেট মহল। দুই বলে দশ রান অথবা তিন বলে বারো রান, এই ধরনের অনেক কিছুই ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে কিন্তু 5 বলে 28 রানের প্রয়োজন আর সেখানে পরপর পাঁচটি ছক্কা এটা যেন রীতিমতো অসম্ভব একটা ব্যাপার আর সেটাই করে দেখিয়েছে রিঙ্কু সিং। এই ঘটনার ফলে অনেক সমীকরণ পাল্টে গেছে, একদিকে যেমন রাতারাতি রিংকু সিং এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং মানুষ জানতে পেরেছেন যে রিংকু সিং আসলে কে বা কতটা যোগ্য তিনি। আবার তার পাশাপাশি রীতিমতো কনফিডেন্সে আঘাত লেগেছে বোলার যশ দয়ালের।

যশ দলের বাবা চন্দ্রপাল দয়াল, তাঁর দিন শুরু করেন সকালের সংবাদপত্র দিয়ে। কিন্তু সোমবার, জীবনে প্রথম বারের মতো তিনি সংবাদপত্র ছুঁয়েও দেখেননি। কারণ তিনি রবিবার রাত থেকেই তাঁর ছেলে যশ দয়ালের কান্নাকাটি দেখে ভয়ে রয়েছেন। মুষড়ে পড়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়াও দেখেননি। যশের শেষ বলে রিঙ্কু সিং ছক্কা মারার সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রপাল দয়াল এলাহাবাদে নিজের বাড়ির টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। উল্টোদিকে আলিগড়ের রিঙ্কুর পরিবার উৎসবে মেতেছিল।এ দিকে চন্দ্রপাল দয়াল তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেন যে, যশকে টেলিভিশনে অশ্রুসিক্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছে। এই যন্ত্রণা থেকে ছেলেকে বের করার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ করেন যশের বাবা।

চন্দ্রপাল তাঁর ছেলেকে ফোন করার আগে, তাঁর কাকা, কাকি, তুতো বোন, যাঁরা ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের টিম হোটেলে পাঠান। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে চন্দ্রপাল বলেছেন, ‘আমি ওদের বলেছিলাম টিম হোটেলে যেতে এবং যশকে অনুপ্রাণিত করতে। ওর মনোবল বাড়াতে বলেছিলাম। ও খুব খারাপ ভাবে ভেঙে পড়েছিল। ও এমনিতেই খুব কম কথা বলে। ভীষণ অন্তর্মুখী এবং এই ধরনের পরিস্থিতিতে ও বড় বেশি ভেঙে পড়ে।’ চন্দ্রপাল, যিনি নিজে একজন ফাস্ট বোলার ছিলেন। আশির দশকের শেষের দিকে ভিজি ট্রফিতে খেলেছিলেন, তিনি বলছিলেন, ‘আমি একজন ক্রিকেটার ঠিকই, তবে বাবা-মা হওয়া একেবারে আলাদা। আমি কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম। মাথার মধ্যে ঘুরছিল, কেন এটা ঘটল, কী ভাবে ঘটল। আমি ছেলের জন্য খুবই চিন্তিত বয়ে পড়েছিলাম।’

তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, এই কঠিন সময়ে তিনি তাঁর ছেলের সঙ্গেই থাকবেন এবং মাঠ থেকে পরবর্তী খেলাটি দেখবেন।এর পর তিনি যশকে ফোন করেন। চন্দ্রপাল যখন ফোন করেন, তখন যশ কাকা এবং কাকির সৌজন্যে নিজেকে কিছুটা সামলে উঠেছিলেন। চন্দ্রপাল ছেলেকে বলেন, ‘ঘাবড়াবে না।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি তখন ওকে বলেছিলাম, এটা ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। বোলাররা মার খাবেই। বড় বোলারদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। শুধু কঠোর পরিশ্রম করতে থাক, খুঁজে বের করো, কোথায় ভুল হয়েছে। তবে মনে রাখবে, ক্রিকেটে এটি প্রথম বার হয়নি। মালিঙ্গা, স্টুয়ার্ট ব্রডের মতো বড় খেলোয়াড়রাও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।’

নিজের পুরনো কথা মনে করিয়ে দিয়ে চন্দ্রপাল নিজেই বলেন, ‘এখানেই একটি সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিল, আইপিএলের মতো আন্তর্জাতিক নয়। কিন্তু তার পরেও… একজন সাধারণ ব্যাটসম্যান আমাকে ৩টি ছক্কা মেরেছিল। আমি যশকে সেই গল্প বহুবার বলেছি। সেমিফাইনাল ম্যাচটি আমরা হেরেছিলাম। গতকাল রাতে ফোন করার সময় আমি ওকে আবার আমার এই কথাটা মনে করিয়ে দিয়েছিলাম,’

তারপর তিনি যশকে বলেছিলেন যে, তিনি ১৩ এপ্রিল মোহালিতে পরবর্তী ম্যাচে স্টেডিয়ামে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, তোমার কাছে আসছি। তোমার সঙ্গে থাকব। এটা একটি অন্ধকার রাত ছিল, এবং আমি আশা করি, এটা ওর জীবনে আর পুনরাবৃত্তি হবে না। ও অবশ্যই শক্তিশালী ভাবে ফিরে আসবে।’