এই মুহূর্তে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে টিম ইন্ডিয়া। একদিকে যেমন ভারতের ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন তার পাশাপাশি যেভাবে ভারতের বোলাররা বিশেষ করে পেশ বোলাররা বোলিং করছে তা অবাক করেছে সারা বিশ্বের ক্রিকেট প্রশংসকদের। বিশেষত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয় বোলাররা যে ধরনের বোলিং করেছেন তা অবাক করেছে বিশ্বের তাবড় তাবড় ক্রিকেটারদের। ভারতের দুই বোলার মোহাম্মদ সামি এবং বুমরা দুর্দান্ত বোলিং করেছেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তবে ভারতের এই দুই বোলার এর দুজনেরই চরম প্রশংসা করেছেন পাকিস্তান লেজেন্ড ওয়াসিমা আক্রম। তবে তার মধ্যে এমন একজন বোলার রয়েছেন যাকে তিনি নিজের থেকেও ভালো বোলার বলে মনে করছেন।
ওয়াসিম আক্রমের থেকেও ভালো বোলিং করেন জসপ্রীত বুমরাহ। ভারতের তারকা পেসারকে এমনই সার্টিফিকেট দিলেন খোদ ‘সুলতান অফ সুইং’ আক্রম। কোনওরকম সংকোচ ছাড়াই বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা বোলার তথা পাকিস্তানের প্রাক্তন তারকা জানান, বল যখন সুইং হচ্ছে, তখন নয়া বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাঁর থেকেও এগিয়ে আছেন বুমরাহ। ভারতীয় পেসারকে বর্তমানে বিশ্বের সেরা বোলার হিসেবেও চিহ্নিত করেন আক্রম। সেইসঙ্গে মজা করে তিনি বলেন যে এই মুহূর্তে বুমরাহকে আটকানোর একটাই উপায় আছে। আর সেটার জন্য বুমরাহের বুট চুরি করে নিতে হবে।
আক্রম এমন একটা দিনে সেই মন্তব্য করেন, যেদিন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ বোলিং করেছেন বুমরাহ। লখনউয়ের পিচে ভারতীয় স্পিনাররা কতটা ভালো বল করবেন, তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ইংল্যান্ডের টপ-অর্ডারে কাঁপুনি ধরিয়ে দেন তিনি। পরপর দু’বলে দু’উইকেট (ডেভিড মালান ও জো রুট) নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপে আতঙ্ক ধরিয়ে দেন। ওই স্পেলে তাঁর বলে ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে থরহরিকম্প হচ্ছিল ইংরেজদের। অথচ পিচ যে পেসারদের অনুকূল ছিল, এমনও হয়। তা সত্ত্বেও ৬.৫ ওভারে ৩২ রান দিয়ে তিন উইকেট তুলে নেন বুমরাহ।আর সেই পারফরম্যান্স দেখার পর বুমরাহকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন আক্রম।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এ স্পোর্টসের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রাক্তন তারকা বলেন, ‘যদি না আমার ভুল হয়, তাহলে এটা (টিভি স্ক্রিনের দিকে ইঙ্গিত করে) ওর প্রথম ওভার ছিল। (প্রথমে) ইনসুইং (করে), (তারপর) দুটি আউটসুইং (করে)। তারপর এটা। এটা দুর্দান্ত বল। আমি দেখছিলাম। লেংথ এবং সিমের অবস্থান দেখুন। বল কী সিম হচ্ছে। অ্যারাউন্ড দ্য উইকেট।’সঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাঁ-হাতিকে আনপ্লেয়বেল বল করছিল। আর সেভাবেই ও (বুমরাহ) চাপ তৈরি করে। স্টাম্পের সামনে ব্যাটের ভিতরের দিকে কাণায় বল লেগেছে। গড়পরতা শট। আবার দেখুন, মনের সুখে ইয়র্কার করেছে। বর্তমানে ও বিশ্বের সেরা (বোলার)। ও যেভাবে খেলছে, তাতে সকলের উপরে আছে। বলের উপর নিয়ন্ত্রণ, পেস, ভেরিয়েশন – ও কমপ্লিট বোলার।’
সেখানেই বুমরাহের প্রশস্তি থামাননি আক্রম। তিনি বলেন, ‘নয়া বলে এরকম পিচে, এরকম কন্ডিশনে, এরকমভাবে (বল) বাইরে বের করা…. (দুর্দান্ত)। প্রথম ওভারে দুটি বল বাইরে বের করল। তৃতীয় এবং চতুর্থ বল ভিতরে নিয়ে এল। গ্যাপ দিয়ে বেরিয়ে এল। কিপার এখান (হাত দিয়ে দেখিয়ে) থেকে বলটা ধরে। পেস, ক্যারি, ফলো থ্রু – আপনি যা বলবেন, সেটা বুমরাহের আছে। কমপ্লিট বোলার।’অ্যারাউন্ড দ্য উইকেট বুমরাহ কীভাবে বাঁ-হাতি ব্যাটারদের বল করেন, তা হাতেকলমে দেখিয়েও দেন ‘সুইং অফ সুলতান’।
তাঁর কথায়, ‘এদিক থেকে এসে ও যখন বলে, তখন ওর সিম (সিম পজিশন দেখিয়ে) এরকম থাকে। সিম এরকম থাকে আর ও সিমটা এরকমভাবে এনে (পিচে) মারে। তাই ক্রিজের কিছুটা বাইরের দিকে গিয়ে বলটা ফেলে, তখন মনে হয় যে বলটা ভিতরের দিকে আসছে। ওই অ্যাঙ্গেল থেকে ব্যাটার খেলতে চায়। কিন্তু বলটা বাইরে গেলে ব্যাটার বিট হবেই।’ সেই রেশ ধরেই নিজে কীভাবে বল করতেন, সেটা দেখিয়ে দেন আক্রম। তিনি বলেন, ‘আমি যখন নয়া বলে ডানহাতি ব্যাটারকে বল করতাম, কখনও কখনও আমি এরকমভাবে বল ধরে (বল ধরে হাতেকলমে দেখিয়ে) কনুই এরকমভাবে রেখে বল ফেলতাম। যাতে বলটা এরকম ভিতরে ঢুকে যায় এবং পিচে পড়ে বাইরে চলে যায়। কিন্তু নয়া বলে আমার থেকে বুমরাহের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতভাবে বেশি।’
ভারতীয় পেসারের যখন ভূয়সী প্রশংসা করছেন আক্রম, তখন ওই পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের সঞ্চালক মজার ছলেই প্রশ্ন করেন যে নয়া বলেও দুর্দান্ত বোলিং করছেন বুমরাহ, ডেথ ওভারেও করছেন; তাহলে তাঁকে আটকানোর উপায় কী। সেই প্রশ্ন শুনে আক্রম বলেন, ‘বুমরাহকে চাপে ফেলার একটাই উপায় আছে। ওর বুট চুরি করে নিতে হবে (হাসতে-হাসতে)। আর কোনও উপায় নেই।’