সিনেমা দেখে খুনের প্ল্যান,৬ মাস পুলিশকে বোকা বানিয়ে, একটা ভুলের জন্য ধরা পড়লো আফতাব

প্রেমিকাকে খুনের আগে থেকেই তাঁর দেহ লোপাট করার জন্য ছক কষেছেন। প্রেমিকার খুনের পর তা ধামাচাপা দিতে কসরতও কম করেননি। দেহ থেকে দুর্গন্ধ রুখতে অনলাইনে কিনেছেন রাসায়নিক। দেহের ৩৫ টুকরোয় পচন রুখতে কিনেছেন বড়সড় ফ্রিজও। উপরি হিসাবে একের পর এক মিথ্যার জালও বুনেছিলেন শ্রদ্ধা ওয়ালকর খুনে অভিযুক্ত তাঁর প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। নিজের মিথ্যার জালেই কি ফেঁসে গেলেন আফতাব? শ্রদ্ধা-খুনে কেন আফতাবকেই সন্দেহ করলেন তদন্তকারীরা?

দিল্লির এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশের দাবি, প্রেমিকা শ্রদ্ধাকে খুনের পর নিজের পাতা পর পর ভুলের জালেই ধরা পড়ে গিয়েছেন আফতাব। ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করে তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করার পর থেকে এমন কিছু কাজ করেছেন তিনি, যাতে মনে হতে পারে যে শ্রদ্ধা তখনও জীবিত। তবে তাতেই তাঁর কাল হল! শ্রদ্ধাকে খুনের পর মাস ছয়েক ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিলেও ওই ভুলগুলির জন্যই আফতাবকে সন্দেহ করতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। গত মাসে মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করেছিলেন শ্রদ্ধার বাবা তথা মহারাষ্ট্রের বসইয়ের বাসিন্দা বিকাশ ওয়ালকর।

মানিকপুর থানায় অভিযোগ করেছিলেন তিনি।পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে নেমে ২৬ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শ্রদ্ধার লিভ-ইন পার্টনার আফতাবকে থানায় তলব করে পুলিশ। পুলিশের কাছে আফতাবের দাবি ছিল, তাঁদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হওয়ায় ২২ মে তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন শ্রদ্ধা। এমনকি, যাওয়ার সময় তাঁর মোবাইল ফোন ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্রও ফ্ল্যাটে রেখে গিয়েছেন। প্রসঙ্গত, সে সময় দিল্লির মেহরৌলি এলাকার ছতরপুরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন আফতাব-শ্রদ্ধা। যদিও পুলিশের দাবি, আফতাবের ওই বক্তব্য মিথ্যা। তার ৪ দিন আগেই অর্থাৎ ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করেছেন আফতাব।

সূত্রের খবর, আফতাবের বক্তব্য নথিভুক্ত করে তদন্ত করতে থাকে মানিকপুর থানার পুলিশ। শ্রদ্ধার মোবাইলের তথ্য খতিয়ে দেখে জানা যায়, ২২ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে শ্রদ্ধার মোবাইল ব্যবহার করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আফতাবের ব্যাঙ্কে ৫৪ হাজার টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। লোকেশন ছিল— মেহরৌলির ছতরপুল এলাকা! ঠিক যেখানকার ফ্ল্যাটে আফতাব তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে থাকতেন। এতেই আফতাবের বিরুদ্ধে সন্দিহান হয়ে ওঠেন তদন্তকারীরা। ২৬ অক্টোবর আফতাবের দাবি ছিল, ‘‘২২ মে-র পর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখেননি শ্রদ্ধা।’’ চলতি মাসে আফতাবকে আবার থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। সে সময় তিনি দাবি করেন, শ্রদ্ধার হয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিনিই টাকা পাঠিয়েছেন। প্রেমিকার ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটানোর জন্যই এমনটা করেছিলেন বলে দাবি ছিল তাঁর। যাতে শ্রদ্ধাকে ব্যাঙ্কের হয়রানির মুখে না পড়তে হয়। আফতাবের কাছে শ্রদ্ধার ব্যাঙ্কিং অ্যাপের পাসওয়ার্ডও ছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের নজরে পড়ে, শ্রদ্ধার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও আফতাবের গতিবিধি রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে ঢুকে শ্রদ্ধার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে চ্যাটও করেছেন আফতাব। ৩১ মে এমনই একটি চ্যাটের সময় শ্রদ্ধার মোবাইলের লোকেশন ছিল ছতরপুর। এর পরই মানিকপুর থানার পুলিশ দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে।সূত্রের খবর, আফতাবকে আটক করে আর একপ্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদের সময় দিল্লি পুলিশের কাছে তিনি ভেঙে পড়েন বলে দাবি। পুলিশের যুক্তি, আফতাবের বক্তব্য অনুযায়ী ২২ মে তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় শুধু মাত্র মোবাইল ফোন নিয়ে গেলেও মেহরৌলিতে তার লোকেশন দেখাচ্ছে কেন?রাজধানীর এই শোরগোল ফেলে দেওয়া হত্যাকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ছতরপুরের জঙ্গল থেকে ১৮টি হাড় উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করেছিলেন তিনি। ওই টুকরোগুলির এক-একটি অ্যালুমনিয়ামের ফয়েলে ভরে প্রতি রাতে ছতরপুরের জঙ্গলে ফেলতে যেতেন আফতাব। যদিও উদ্ধার হওয়ার টুকরোগুলি শ্রদ্ধারই দেহের কি না, তা খতিয়ে দেখছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।