প্লেনের টয়লেটে মাকে বসিয়ে প্রিম্যাচিওর সন্তান প্রসব করালেন ! দেখুন গাইনোকোলজিস্টের লড়াই!

হাসপাতালের অপারেশন রুমে একাধিকবার সন্তান প্রসবে ক্লায়েন্টকে সাহায্যও করেছেন নিঃসন্দেহে। তা বলে সেটাই যে করতে হবে মাঝ-আকাশে, প্লেনের টয়লেটের ভিতরে, সেটা কি কল্পনাও করে উঠতে পেরেছিলেন গাইনোকোলজিস্ট শৈলজা ?কিন্তু শৈলজা কী করে হাতের কাছে কোনও মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট না থাকা সত্ত্বেও অসাধ্যসাধন করলেন, সেটাই এ বার জেনে নেওয়ার পালা।

দিল্লি থেকে বিমান ছাড়ার মিনিট পনেরো পর থেকেই মোনিকা নামের এক মধ্য-তিরিশের মহিলার তলপেটে ব্যথা শুরু হয়। তিনি সে কথা বিমানকর্মীদের জানাতে ওই ফ্লাইটে উপস্থিত প্লাস্টিক সার্জন নাগরাজ তাঁকে পরীক্ষা করেন। নাগরাজের মনে হয়েছিল যে মোনিকা তীব্র অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন।তখনই…..তাঁকে দেখে চমকে ওঠেন ফ্লাইটে উপস্থিত থাকা শৈলজা…..

```

দিল্লি থেকে তিনি ফিরছিলেন বেঙ্গালুরুতে। শৈলজা দেখেন যে মোনিকার রক্তপাত হচ্ছে। তখনই তাঁর ব্যাপারটা ধরতে দেরি হয়নি। তিনি বুঝতে পারেন স্পষ্ট- মোনিকার শরীরের অভ্যন্তরে জল ভেঙে গিয়েছে, শুরু হয়ে গিয়েছে প্রসববেদনা। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন তিনি!

এর পর আর দেরি না করে দ্রুত নিজেকে স্যানিটাইজ করে নেন শৈলজা, পরে নেন পিপিই কিট। তার পর মোনিকাকে প্লেনের টয়লেট সিটে বসিয়ে তিনি সন্তান প্রসবে সাহায্য করেন। শৈলজা জানিয়েছেন যে শিশুটির মাথা বেরিয়ে আসতেই তিনি সজোরে মোনিকার তলপেটে চাপ দিতে থাকেন। এক সময়ে পুরোপুরি ভাবে মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে শিশুটি। এর পরেই শুরু হয় আসল লড়াই…..

```

কেন না শিশুটি জন্মেছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগে, অর্থাৎ চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় সে প্রিম্যাচিওর! হাসপাতালে এমন শিশুর জন্ম হলে তাকে সাধারণত রাখা হয়ে থাকে ইনটেনসিভ কেয়ারে। কিন্তু প্লেনে তো সে সুবিধা মিলবে না! তা হলে উপায়? এই জায়গাতে এসেই বিমানযাত্রীদের সাহায্য চান শৈলজা। অনুরোধ করেন যদি ডায়াপার, শাল- এ সব কিছু থাকে, তাঁরা যেন দ্বিধা না করে দান করেন। বিমানযাত্রীদের মধ্যেও তখন চারিয়ে গিয়েছে আনন্দ এবং উত্তেজনা- তাঁরা একে একে শৈলজার হাতের কাছে এগিয়ে দিতে থাকেন ডায়াপার, শাল, চাদর- যাঁর যা আছে!

শৈলজা জানিয়েছেন যে সন্তানের নাড়ি কাটার সময় থেকেই তাঁকে পড়তে হয়েছিল সমস্যার মুখে। হাসপাতালে ক্ল্যাম্প দিয়ে নাড়ি সুষ্ঠু ভাবে কাটা যায়। কিন্তু ফ্লাইটে তা ছিল না বলে নাড়ি কাটার পরেও রক্তপাত আটকাতে তাঁকে গজ ব্যবহার করতে হয়েছে। এর পর রয়েছে ১.৮২ কেজির শিশুটির দেখভাল! এ বিষয়ে শৈলজা জানিয়েছেন যে তিনি ক্যাঙ্গারু কেয়ার পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছেন। অর্থাৎ প্রিম্যাচিওর শিশুটিকে তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুড়ে মায়ের বুকের উপরে রাখা যাতে সে ঠিক থাকে।

খবর মোতাবেকে, মোনিকা এবং তাঁর পুত্রসন্তান দুই তরফই আপাতত সুস্থ আছেন শৈলজার কল্যাণে। আর সে জন্য শৈলজা গর্বিতও নন! চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র এবং চেষ্টা করেছেন যথাসাধ্য- কৃতিত্ব দাবিতে তিনি ইচ্ছুক নন। তবে একটা প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি তিনি- ফ্লাইটগুলোয় কেন সন্তানপ্রসবের উপযোগী ব্যবস্থা এবং ইক্যুইপমেন্ট থাকে না? মোনিকার ঘটনাই তো প্রমাণ দিয়েছে যে এমনটা হতেই পারে!