ছেড়ে পালায় প্রেমিক,সন্তানকে মানুষ করতে আইস্ক্রিম বেচতেন,পরিশ্রমে আজ সাব-ইন্সপেক্টর কুর্নিশ নেটিজেনদের

একদা যিনি এলাকায় ঠাণ্ডা পানীয়-আইসক্রিম বিক্রি করতেন, এখন তিনিই স্থানীয় থানার সাব-ইনস্পেক্টর। কেরলের তরুণী অ্যানি শিবার কাহিনীটা ঠিক এমনই। ছোট বয়সে পরিবারের অমতে প্রেমিকের সঙ্গে লিভ-ইন করতেন কলেজ পড়ুয়া অ্যানি। সন্তান্সম্ভবা হয়ে পড়ায় তাঁকে ত্যাগ করেন ভালবাসার সেই মানুষ। গর্ভে সন্তান নিয়ে তখন অথৈ জলে এই তরুণী। সন্তান কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরলেও তাঁকে অস্বীকার করে পরিবার। জীবনযুদ্ধে তাঁর কণ্টকদীর্ণ রাস্তা আরও একটা বাড়ে। ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে ছেলেকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন অ্যানি। আয়ের উৎস খুঁজতে মশলা, সাবানের ব্যবসা শুরু করেন। বাড়তি আয়ের খোঁজে বিমা এজেন্ট হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন।

আরও একটু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে তিরুঅনন্তপুরমের শুরু ভারকালে ঘুরে ঘুরে শুরু করেন লেবু জল ও আইসক্রিম বিক্রি। তাঁর পরিচিতরা জানান, তরুণী অবস্থায় একদম প্রথমদিকে ধাক্কা খেয়ে আর পিছনে ফিরে তাকাননি তিনি। সব হারিয়ে গিয়েছে এমন হতাশায় বসেও থাকেননি ঘরে। ক্রমাগত চালিয়ে গিয়েছেন লড়াই।এভাবে একটু একটু অর্থ জমিয়ে সমাজবিদ্যায় স্নাতক হয়েছেন অ্যানি। এরপর ২০১৪ সালে কেরল পুলিশে পরীক্ষার জন্য কোচিং নেওয়া শুরু করেন। একদিকে সন্তান মানুষ, একইসঙ্গে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। সব দুই হাতেই সামলাচ্ছিলেন তিনি।২০১৬ সালে পুলিশের পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি পান তিনি। পেরোন জীবনযুদ্ধে সাফল্যের এক মাইলফলক। প্রায় ৩ বছর কাজ করার পর ২০১৯ সালে সাব-ইনস্পেক্টর হওয়ার জন্য আয়োজিত পরীক্ষায় বসেন এই তরুণী। তাতেও পাশ করে চলতি বছরের ২৫ জুন সেই ভারকালা থানার সাব ইনস্পেক্টর হয়ে আসেন তিনি।

একদশক আগে যে এলাকায় অ্যানি লেবু জল বিক্রি করতেন, হাতের তালুর মতো জেনেছিলেন অলিগলি। আজ সেই গলি, রাজপথ-সহ এলাকা রক্ষার দায়িত্ব তাঁর হাতেই। তাঁর এই সাফল্যের কাহিনী চাউর হতেই সোশাল মিডিয়া ভরে যায় অভিনন্দনের বন্যায়। সংবাদমাধ্যমকে অ্যানি বলেছেন, ‘এক সময় যে এলাকায় তাঁর জীবনযুদ্ধ চলত, চোখের জল পড়ত, সেই এলাকার সাব-ইনস্পেকটর হিসেবে দায়িত্ব পালন। লড়াইটা খুব একটা মসৃণ নয়।‘

তিনি বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি আইপিএস হব। সেই লক্ষেই পড়াশুনা শুরু করি। নিজেকে যতক্ষণ না হার স্বীকার করছ, ততক্ষণ কোনও ব্যর্থতা পরাজয় নয়।‘