বিজয় হাজারে ট্রফিতে বাংলা একমাত্র তামিলনাড়ুর কাছেই ল্যাজেগোবরে হয়ে হেরেছিল। সেই ম্যাচটি বাদ দিলে, বাকি পাঁচটি ম্যাচেই বাংলা লড়াকু পারফরম্যান্স করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। আর মঙ্গলবার পঞ্জাবকে ৫২ রানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল লক্ষ্মীরতন শুক্লার টিম। তারা তাদের গ্রুপ ‘ই’র শীর্ষে থেকে গ্রুপ পর্বের লড়াই শেষ করে। বিজয় হাজারের সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে মঙ্গলবার পঞ্জাবের বিরুদ্ধে জিততেই হত বাংলাকে। সেই ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে বাংলা তোলে ২৪২ রান।
তবে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই বড় ধাক্কা খায় বাংলা। হাবিব গান্ধী প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে যান। এর পরেও উইকেট পতন আটকায়নি বাংলার। ৩৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় তারা। ৩৯ রানে পরপর দুই উইকেট পড়ে। অর্থাৎ ৪০ হওয়ার আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে থাকে বাংলা। ১০০ রানের মধ্যে পড়ে আরও ২ উইকেট। ৮৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলা যখন প্রবল চাপে, তখন ত্রাতা হয়ে ওঠেন অনুষ্টুপ মজুমদার। পাশে পান করণ লালকে। তাঁরা সপ্তম উইকেটে ১৪৫ রান যোগ করে। যেটা বাংলার জন্য বড় অক্সিজেন হয়। অনুষ্টুপ ১০টি চারের হাত ধরে ১১৬ বলে অপরাজিত ১১১ রানের দুরন্ত একটি ইনিংস খেলেন। নিঃসন্দেহে অনুষ্টুপের এই ইনিংসটি না থাকলে বাংলাকে এদিন হারতে হত।
সেই সঙ্গে অনুষ্টুপ ভেঙে দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নজিরও। লিস্ট-এ ক্রিকেটে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে বাংলার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরের মালিক হলেন অনুষ্টুপ। এর আগেই এই নজির ছিল সৌরভের ঝুলিতে। তিনি ২০০৫-০৬ মরশুমে লিস্ট-এ-র ম্যাচে ৮৯ রান করেছিলেন। সেই রেকর্ডই মঙ্গলবার ভেঙে নয়া নজির গড়লেন অনুষ্টুপ। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে লিস্ট-এ-র ম্যাচে সেঞ্চুরি করা বাংলার প্রথম প্লেয়ার হলেন অনুষ্টুপই। আটে নেমে অনুষ্টুপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেছেন করণ লালও। করণ যদি ক্রিজে না টিকতে পারতেন, তবে অনুষ্টুপ অপরাজিত থেকেও কিছু করতে পারতেন না। তাই করণের কৃতিত্ব কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। সাতটি চার, দু’টি ছয়ের হাত ধরে করণ লাল ৬৩ বলে ঝকঝকে ৬৬ রান করেন।
এছাড়া অধিনায়ক সুদীপ ঘরামি করেন ২৬ রান। শাহবাজ আহমেদ ১৬ রান করেন। বাকি আর কোনও ব্যাটার ১০ রানের গণ্ডি পার করতে পারেননি। নির্দিষ্ট ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলা করে ২৪২ রান। পঞ্জাবের বলতেজ সিং একাই ৫ উইকেট তুলে নেন। ১০ ওভার বল করে দেন ৩৫ রান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন সিদ্ধার্থ কৌল, অভিষেক শর্মা, প্রেরিত দত্ত এবং ময়াঙ্ক মারকন্ডে।রান তাড়া করতে নেমে পঞ্জাব শুরুটা বেশ ঝোড়ো মেজাজেই করেছিল। ৩.২ ওভারে প্রথম উইকেট হারানোর আগে ২৯ রান করেও ফেলেছিল তারা। কিন্তু ১১ বলে ১৬ করে আগুনে মেজাজে থাকা অভিষেক শর্মাকে ফিরিয়ে পঞ্জাবকে বড় ধাক্কাটা দেন বাংলার মহম্মদ কাইফ।
এখানেই কিছুটা গতি প্রতিহত হয় পঞ্জাব ব্যাটারদের। এর পরেই পঞ্জাবের আর এক ওপেনার প্রভসিমরন সিং-কে ফেরান শাহবাজ আহমেদ। ১৮ বলে ৩১ রান করে ফেলেছিলেন প্রভসিমরন। দলের ৫৬ রানের মধ্যে এই দু’টো ধাক্কা পঞ্জাবকে কিছুটা চাপে ফেলে। তবে সেই চাপ কাটাতে পঞ্জাব পাল্টা আগ্রাসনের পথ বেছে নেয়। আর এতেই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে তারা। শেষ পর্যন্ত ২৪.১ ওভারে পঞ্জাব ১৯০ রান করে ফেললেও, অলআউট হয়ে এখানেই থেমে যায় তাদের ইনিংস। পঞ্জাবের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন সনভীর সিং। তিনি ২৪ বলে ৩৫ করেছেন। অধিনায়ক মনদীপ সিং ৩১ বলে ২৭ রান করেছেন। ১৭ বলে ১৩ করেছেন সিদ্ধার্থ কৌল। এঁদের বাইরে বাকিরা কেউ ২০ রানের গণ্ডি টপকাতে পারেননি। বাংলার হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন শাহবাজ আহমেদ এবং কৌশিক মাইতি।
২টি করে উইকেট নিয়েছেন মহম্মদ কাইফ এবং প্রদীপ্ত প্রামাণিক।গ্রুপ-ই-তে তামিলনাড়ুর সঙ্গে সমান পয়েন্ট বাংলার। কিন্তু লক্ষ্মীর টিম এগিয়ে রয়েছে নেট রানরেটে। তাই গ্রুপ শীর্ষে থেকে বাংলা সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে। নক আউটের সব ম্যাচগুলিই হবে রাজকোটে। ৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ। বাংলা সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে ১১ ডিসেম্বর। ফাইনাল হবে ১৪ ডিসেম্বর।